দুই সপ্তাহ ধরে স্থবির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম

অফিসে প্রবেশে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের বাধার মুখে  নতুন ডিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন চিকিৎসকরা। এর নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলপন্থী (বিএনপি) চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালককে অপসারণের জন্যও কর্মসূচিতে রয়েছেন তারা। বাধার মুখে নিয়োগের পর অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। একই সঙ্গে অন্যান্য পরিচালক ও পদস্থ কর্মকর্তারা অফিসে না আসায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয় ৫ আগস্ট। এর পরই আন্দোলনে নামেন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এতে তৎকালীন মহাপরিচালকসহ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি করেন তারা।

এরপর ১৮ আগস্ট তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। একই দিন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। নিয়োগের পর একদিনও অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। তাকে অপসারণের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছেন ড্যাবের চিকিৎসকরা।

আন্দোলনকারী বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা জানান, গত দেড় দশকে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের নেতৃত্বে কাজ করবেন না তারা। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা অবৈধ নিয়োগ দিয়েছেন, পদোন্নতি দিয়েছেন। ফলে নতুন মহাপরিচালককেও তারা মেনে নিতে পারছেন না।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রবেশের চেষ্টা করেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিন। এতে বাধা দেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা। এদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শনে আসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। তিনি ওই দিন সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনের সামনে পৌঁছলে একদল চিকিৎসক পথ আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ডা. রোবেদ আমিনকে অপসারণের দাবি করেন তারা। উপদেষ্টা অধিদপ্তরে প্রবেশ না করতে পেরে মহাখালী ডিএনসিসি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে বৈঠকে বসেন। তবে সেখানেও চিকিৎসকরা গিয়ে উপদেষ্টার সামনে হট্টগোল করেন। 

নতুন নিয়োগ পাওয়া মহাপরিচালকের অপসারণের দাবির বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেননি চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে ড্যাবের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার সভাপতি ও কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক) ডা. মো. ফারুক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেহেতু একটা চেঞ্জ আসছে, তাই চাচ্ছি চেঞ্জ আসুক। এই ছোট্ট একটা বিষয়ে। যেভাবেই হোক, তারা আগের সরকারের সময় সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এখন মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেয়। ডা. রোবেদ স্যার সম্পর্কে যতটুকু জানি, তিনি ভালো মানুষ। চাই, অন্য কেউ নিয়োগ পাক। আরো অনেক সিনিয়র অধ্যাপক রয়েছেন।’

এদিকে সরকারের পতনের পর দিন থেকে টানা কয়েকদিন আন্দোলন করেছিলেন স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ সব কর্মকর্তার অপসারণসহ দুই দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছিলেন তারা।

অ্যাসোসিয়েশন জানায়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায় (ইউনিয়ন পর্যায় থেকে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান) পর্যন্ত কর্মকর্তারা (বিসিএস স্বাস্থ্য) দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ক্যাডার সার্ভিস গঠন হওয়ার পর থেকে সীমাবদ্ধতা, অপ্রাপ্তি ও বৈষম্যের মধ্যেও গত চার দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন তারা। তবে সরকারি চাকরিবিধির বাইরে এসে এডহক নিয়োগ ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পদায়ন-পদোন্নতি দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন